কুরআন তিলাওয়াতের পূর্ব প্রস্তুতি

পবিত্র কুরআন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা কর্তৃক নাজিলকৃত সর্বশেষ ও চূড়ান্ত গ্রন্থ। এটি শুধুমাত্র তিলাওয়াত করার জন্য নয়, বরং জীবন চলার পূর্ণাঙ্গ দিকনির্দেশনা। কুরআন তিলাওয়াত করার পূর্বে আমাদের উচিত নিজেকে শারীরিক ও আত্মিকভাবে প্রস্তুত করা, যেন আদবের সাথে আমরা আল্লাহর কালাম পাঠ করতে পারি।


🌿 কুরআন তিলাওয়াতের পূর্ব প্রস্তুতি অজু করা (وضوء) কুরআন মাজীদ স্পর্শ করার জন্য ও তিলাওয়াতের জন্য অজু অবস্থায় থাকা উত্তম ও সম্মানজনক। যদিও মুখস্থ পড়ার ক্ষেত্রে মতভেদ আছে, তবে অধিক ফজিলত লাভের জন্য সব অবস্থাতেই অজু করে পড়া উত্তম।

আল্লাহ বলেন:
وَرَتِّلِ الْقُرْآنَ تَرْتِيلًا
উচ্চারণ: Wa rattiril-Qur'āna tartīlā
বাংলা অর্থ: "তুমি কুরআন তিলাওয়াত করো সুস্পষ্ট ও ধীরস্থিরভাবে।"
— (সূরা আল-মুযাম্মিল, ৭৩:৪)

এই আয়াতটি থেকে বোঝা যায়, কুরআন পড়তে হলে ধীরস্থিরতা, স্পষ্ট উচ্চারণ এবং আদব থাকা চাই।

🌿 কুরআন তিলাওয়াত শুরুর দোয়াসমূহ
🕋 ১. তাওয়ুজ (আউযুবিল্লাহ)
আরবি:
أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ
উচ্চারণ:
আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইত্বানির রাজীম
অর্থ: "আমি অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই।"
📖 (সূরা নাহল ১৬:৯৮)

🕋 ২. তাসমিয়া (বিসমিল্লাহ)
আরবি:
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
অর্থ: "পরম দয়ালু, অতি দয়াবান আল্লাহর নামে।"


🌿 কিছু গুরুত্বপূর্ণ দোয়া

🕋 ৩. ইস্তিগফার ও তাওবা
আরবি: أَسْتَغْفِرُ ٱللّٰهَ رَبِّي مِن كُلِّ ذَنبٍ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ
উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লাহি রাব্বি মিন কুল্লি জান্বি ওয়া আতুবু ইলাইহি
অর্থ: "আমি আমার প্রতিপালক আল্লাহর নিকট সব পাপের জন্য ক্ষমা চাই এবং তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করি।"

🕋 ৪. হাওলা-কুওয়াতা
আরবি: لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ العَلِيِّ العَظِيمِ
উচ্চারণ: লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম
অর্থ: "আল্লাহ ছাড়া কোনো শক্তি ও ক্ষমতা নেই; তিনি সর্বোচ্চ ও মহান।"

🕋 ৫. ইলমের দোয়া
আরবি: رَّبِّ زِدْنِي عِلْمًا
উচ্চারণ: রাব্বি যিদনি ইল্‌মা
অর্থ: "হে আমার প্রতিপালক, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন।"
📖 (সূরা তাহা ২০:১১৪)

🕋 ৬. হৃদয় প্রশান্তির দোয়া
আরবি: رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي، وَيَسِّرْ لِي أَمْرِي، وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّن لِّسَانِي، يَفْقَهُوا قَوْلِي
উচ্চারণ: রাব্বিশরাহলি সাদরি, ওয়াইয়াসসির লি আমরি, ওয়াহলুল উকদাতাম মিল লিসানি, ইয়াফকাহু কাওলি
অর্থ: "হে আমার রব! আমার বক্ষ প্রশস্ত করুন, আমার কাজ সহজ করে দিন, এবং আমার জিহ্বার জড়তা দূর করুন, যেন তারা আমার কথা বুঝতে পারে।"
📖 (সূরা ত্বাহা ২০:২৫–২৮)

🕋 দরুদে ইব্রাহিম (Darood-e-Ibrahim)
📖 আরবি মূল:
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَىٰ مُحَمَّدٍ وَعَلَىٰ آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَىٰ إِبْرَاهِيمَ وَعَلَىٰ آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَّجِيدٌ اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَىٰ مُحَمَّدٍ وَعَلَىٰ آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَىٰ إِبْرَاهِيمَ وَعَلَىٰ آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَّجِيدٌ

🔊 উচ্চারণ: "আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিঁ ওয়া আলা আলে মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলে ইবরাহিম, ইন্নাকা হামিদুম মজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিঁ ওয়া আলা আলে মুহাম্মাদ, কামা বারাক্তা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলে ইবরাহিম, ইন্নাকা হামিদুম মজীদ।"

🌟 বাংলা অর্থ: “হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ (সা.) ও তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর রহমত বর্ষণ কর, যেমন তুমি ইবরাহিম (আ.) ও তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর রহমত বর্ষণ করেছো। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও গৌরবময়। হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ (সা.) ও তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর বরকত দান কর, যেমন তুমি ইবরাহিম (আ.) ও তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর বরকত দান করেছো। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও গৌরবময়।”

🔖 সারসংক্ষেপে কুরআন তিলাওয়াতের পূর্বে যেসব বিষয় বিবেচনা করা উচিত:
১. অজু করা – নিজেকে শারীরিকভাবে পবিত্র রাখা
২. আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পাঠ করা
৩. আদব ও মনোযোগ সহকারে পড়া
4. শান্ত পরিবেশে বসে পড়া
৫. শুদ্ধ উচ্চারণ শেখার চেষ্টা করা
৬. অর্থ বোঝার জন্য দোয়া ও ধ্যান করা
৭. শুধু পড়া নয়, জীবনে বাস্তবায়নের নিয়ত করা


🌿 উপসংহার কুরআন তিলাওয়াত করা একটি ইবাদত, এটি দোয়া, এটি আল্লাহর সাথে সংযোগের মাধ্যম। তাই অবশ্যই আমরা যেন অজু করে, পরিপূর্ণ মনোযোগ ও আদবের সাথে কুরআন পড়ি। শুরুর আগে উপরোক্ত দোয়াগুলো পাঠ করলে আল্লাহর সাহায্য ও বরকত লাভ করা সহজ হয়।



কুরআন পড়া শেষ করার পর কী করা উচিত?

✅ ১. আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করা আল্লাহর কিতাব পড়ার তাওফিক দেয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।


✅ ২. দোয়া করা – বিশেষ করে হিদায়াত ও আমলের জন্য উদাহরণ দোয়া: “হে আল্লাহ! তুমি যেমন আমাকে তোমার কিতাব পড়ার তাওফিক দিয়েছো, তেমনিভাবে আমাকে বুঝার ও আমল করার তাওফিক দাও। আমীন।”

✅ ৩. দরুদ শরীফ পড়া কুরআন পড়ার পরে দরুদ পড়া বরকতপূর্ণ ও নেক কাজ।

✅ ৪. কুরআনকে জীবনে বাস্তবায়নের ইচ্ছা পোষণ করা কুরআন শুধুমাত্র পড়ার জন্য নয়, বরং জীবন পরিচালনার জন্য। তাই নিয়মিত নিজেকে প্রশ্ন করুন: “আমি যা পড়লাম, তা কি জীবনে বাস্তবায়ন করতে পারছি?”

📖 কুরআন পড়ার উপকারিতা!

📖 কুরআন থেকে দলিলসমূহ:
সওয়াব ও হেদায়াতের জন্য কুরআন ذَٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ ۛ فِيهِ ۛ هُدًى لِّلْمُتَّقِينَ অর্থ: “এটি সেই কিতাব, এতে কোনো সন্দেহ নেই, এটি মুত্তাকীদের জন্য পথনির্দেশ।” 📚— সূরা আল-বাকারা: ২


আত্মার প্রশান্তির উৎস أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ অর্থ: “নিশ্চয়ই আল্লাহর স্মরণেই অন্তরসমূহ প্রশান্ত হয়।” 📚— সূরা রা’দ: ২৮

আলো ও কিতাব قَدْ جَاءَكُم مِّنَ اللَّهِ نُورٌ وَكِتَابٌ مُّبِينٌ অর্থ: “তোমাদের কাছে এসেছে আল্লাহর পক্ষ থেকে এক আলো এবং এক সুস্পষ্ট কিতাব।” 📚— সূরা আল-মায়িদা: ১৫

শিফা ও রহমত وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ অর্থ: “আমি কুরআনে এমন কিছু অবতীর্ণ করেছি, যা মুমিনদের জন্য আরোগ্য ও রহমত।” 📚— সূরা বনি ইসরাঈল: ৮২

📜 সহিহ হাদীস থেকে দলিলসমূহ:
প্রতিটি হরফে ১০ নেকি
“যে ব্যক্তি কুরআন থেকে একটি হরফ পড়ে, সে একটি নেকি পাবে। প্রতিটি নেকি দশগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। আমি বলি না ‘আলিফ-লাম-মীম’ একটি হরফ; বরং ‘আলিফ’ একটি হরফ, ‘লাম’ একটি হরফ, ‘মীম’ একটি হরফ।” 📚— তিরমিযী: ২৯১০ (সহিহ)

কিয়ামতের দিন কুরআন সুপারিশ করবে “তোমরা কুরআন পাঠ করো, কারণ কিয়ামতের দিন এটি পাঠকের জন্য সুপারিশকারী হবে।” 📚— সহিহ মুসলিম: ৮০৪

জান্নাতে মর্যাদা নির্ধারণকারী হবে “তোমাকে বলা হবে: কুরআন পড়তে থাকো এবং উপরে উঠতে থাকো, যেমনভাবে তুমি দুনিয়ায় পড়তে। তোমার স্থান হবে সেই আয়াত পর্যন্ত যেখানে তুমি পড়া শেষ করবে।” 📚— আবু দাউদ: ১৪৬৪ (সহিহ)

শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি “তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ সেই ব্যক্তি, যে কুরআন শিখে এবং অন্যকে শেখায়।” 📚— সহিহ বুখারী: ৫০২৭

ফেরেশতা নেমে আসে “যে ঘরে কুরআন তিলাওয়াত করা হয়, সেখানে শান্তি নেমে আসে, রহমত ছেয়ে যায়, ফেরেশতারা উপস্থিত হয় এবং শয়তান পালিয়ে যায়।” 📚— সহিহ মুসলিম

আত্মার শক্তি ও আলোর উৎস “মুমিনের জন্য কুরআন হল একটি রশ্মি, যার আলো পৃথিবীতেও থাকে এবং আকাশে উঠে যায়।” 📚— ইবনে মাজাহ: ২১৯ (সহিহ)

✅ কুরআন পড়া কি কেবল পড়ার সাওয়াবেই সীমাবদ্ধ?

উত্তর: না।

কুরআন:
পড়লে – সাওয়াব
শুনলে – সাওয়াব
বুঝলে – হিদায়াত
অর্থে চিন্তা করলে – তাকওয়া বৃদ্ধি
জীবনে বাস্তবায়ন করলে – জান্নাত


✅ ১. পড়লে – সাওয়াব 🔹 হাদীস:
“যে ব্যক্তি কুরআনের একটি হরফ পড়ে, সে একটি নেকি পাবে, এবং প্রতিটি নেকি দশ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। আমি বলি না 'আলিফ-লাম-মীম' একটি হরফ, বরং 'আলিফ' একটি হরফ, 'লাম' একটি হরফ, 'মীম' একটি হরফ।” 📚 — তিরমিযী, হাদীস: ২৯১০ (সহিহ)
➡️ সুতরাং কুরআন পড়ার প্রতিটি হরফেই সাওয়াব রয়েছে।

✅ ২. শুনলে – সাওয়াব 🔹 কুরআন:
"وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَنصِتُوا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ" অর্থ: “যখন কুরআন পাঠ করা হয়, তখন তা মনোযোগ সহকারে শোনো এবং নিরব থেকো, যাতে তোমরা দয়া লাভ করতে পারো।” 📚 — সূরা আরাফ: ২০৪
➡️ আল্লাহ নিজেই কুরআন শোনার নির্দেশ দিয়েছেন, এবং এর বিনিময়ে রহমতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন — অর্থাৎ সাওয়াব ও দয়া।

✅ ৩. বুঝলে – হিদায়াত 🔹 কুরআন:
"هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ" অর্থ: “এটি মানুষের জন্য পথনির্দেশ, এবং হিদায়াত ও সত্য ও মিথ্যার পার্থক্যকারী প্রমাণ।” 📚 — সূরা বাকারা: ১৮৫

🔹 আরেক জায়গায় আল্লাহ বলেন: "كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ إِلَيْكَ مُبَارَكٌ لِّيَدَّبَّرُوا آيَاتِهِ" অর্থ: “এটি একটি বরকতময় কিতাব, আমরা এটি নাযিল করেছি যেন তারা এর আয়াতসমূহ নিয়ে চিন্তা করে।” 📚 — সূরা ছাদ: ২৯
➡️ অর্থাৎ কুরআন বোঝা ও চিন্তা করার জন্যই নাযিল হয়েছে, এবং সেটাই হিদায়াতের পথ।

✅ ৪. অর্থে চিন্তা করলে – তাকওয়া বৃদ্ধি 🔹 কুরআন:
"ذَٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ ۛ فِيهِ ۛ هُدًى لِّلْمُتَّقِينَ" অর্থ: “এই কিতাবে কোনো সন্দেহ নেই, এটি মুত্তাকীদের (তাকওয়াবানদের) জন্য হিদায়াত।” 📚 — সূরা বাকারা: ২
➡️ কুরআন বুঝে পড়া এবং অর্থ নিয়ে চিন্তা করা মানুষকে তাকওয়ার পথে পরিচালিত করে।

✅ ৫. জীবনে বাস্তবায়ন করলে – জান্নাত 🔹 হাদীস:
“কুরআন তোমার পক্ষে কিংবা তোমার বিরুদ্ধে প্রমাণ হবে।” 📚 — সহিহ মুসলিম, হাদীস: ৮০৪

🔹 আরেক হাদীসে:
“কিয়ামতের দিন বলা হবে: কুরআন পড়তে থাকো এবং উপরে উঠতে থাকো... তোমার স্থান হবে সেই আয়াত পর্যন্ত, যেখানে তুমি পড়া শেষ করবে।” 📚 — আবু দাউদ: ১৪৬৪
➡️ যারা কুরআন বাস্তব জীবনে অনুসরণ করে, তাদের জন্য কুরআন জান্নাতের পথ খুলে দেয়।

✍️ উপসংহার 📌 একজন মুসলিমের জন্য কুরআন হলো হিদায়াতের বাতিঘর। কুরআন পড়া শুরু করার আগে যেনো অজু, আদব ও নিয়ত ঠিক থাকে। পড়ার সময় যেন মনোযোগ সহকারে হয়। আর পড়া শেষে যেনো আমরা কৃতজ্ঞতা, দোয়া ও জীবনে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।
কুরআন পড়া শুধুই সাওয়াব অর্জনের মাধ্যম নয়—এটি হল আল্লাহর সাথে সংযোগের পথ, জীবনের দিকনির্দেশনা এবং চিরস্থায়ী মুক্তির চাবিকাঠি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে কুরআন পড়া, বুঝা, শেখা এবং জীবনে বাস্তবায়নের তাওফিক দান করুন। 🤲